অনলাইন রেডিও নানান নামে পরিচিত। কেউ বলেন ইন্টারনেট রেডিও, কোথাও বলা হয় অনলাইন রেডিও। কোনো কোনো দেশে পরিচিত নেট রেডিও, ওয়েব রেডিও, ই-রেডিও, স্ট্রিমিং রেডিও নামে। এ এক নতুন ধরনের গণমাধ্যম। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এ রেডিওর সম্প্রচার করা হয় বলেই এর নাম অনলাইন বা ইন্টারনেট রেডিও।
বাংলাদেশেও বেশ কয়েকটি ইন্টারনেট রেডিও সম্প্রচার অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু দেশে যে এ ধরনের রেডিওর সংখ্যা কত, তার হিসাব পাওয়া যায় না। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে চালু থাকা এ ধরনের সম্প্রচারমাধ্যমের সংখ্যা ৫০-এর কম নয়। এদের প্রচারপদ্ধতি ভিন্ন। কিছু আছে শুধু গান প্রচার করে, আবার কয়েকটিতে গানের পাশাপাশি খবর প্রচার করা হয়। ইন্টারনেট রেডিওর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি আছে, যারা ২৪ ঘণ্টা সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। এরই মধ্যে অনেকগুলো স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া হুটহাট সম্প্রচারে নামাই বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ। উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়াতে মাত্র একটি ই অনলাইন রেডিও আছে “গান বাকসো ” যারা গত ৪ বছর সফলতার সাথে রেডিও চালিয়ে যাচ্ছে।
সরকারি বা বেসরকারি প্রচলিত ধারার FM রেডিওগুলোর সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, কেবল নির্দিষ্ট এলাকার শ্রোতারা তা শুনতে পারেন। কিন্তু ইন্টারনেট রেডিও বিশ্বের যেকোনো জায়গায় অবস্থান করে কম্পিউটার বা মুঠোফোনে শোনা যায়। ইন্টারনেট সংযোগ থাকাটাই মূল কথা। যেমন বাংলাদেশে বসে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকার যেকোনো স্টেশনে যাওয়া যায়। বিশ্বব্যাপী এ রেডিওগুলোর জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম কারণ এটি। নগরকেন্দ্রিক তরুণ-যুবারাই মূলত প্রধান শ্রোতা। এ ছাড়া যেকোনো দেশে প্রবাসী শ্রোতাদের টানতে ইন্টারনেট রেডিওর জুড়ি নেই। লক্ষণীয় হচ্ছে, এ রেডিওর অনুষ্ঠান চলাকালে মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া যায় না। আবার শ্রোতা ইচ্ছে করলেই রিপ্লে করতে পারেন না।
তুলনামূলক কম খরচে, কম জনবল নিয়ে একটি ইন্টারনেট রেডিওর যাত্রা শুরু করা যায়। তবে সেটা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানটি দিনে কতটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে, তার ওপর। কিন্তু এই মাধ্যমের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে, খরচের খাত আছে, আয়ের ব্যবস্থা নেই।
বিজ্ঞাপনই আয়ের একমাত্র উপায়। কিন্তু কয়েকটি ইন্টারনেট রেডিওর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেল, বিজ্ঞাপনদাতারা এ মাধ্যমের বিষয়ে আগ্রহী নন। তাদের ভাষায়, এ মাধ্যম গণমানুষের কাছে পৌঁছায় না। কিন্তু এটাও সঠিক, ইন্টারনেট রেডিওতে বিজ্ঞাপন খরচ অনেক কম। এবং তা পণ্যের দামের ওপর বাড়তি কোনো প্রভাব ফেলে না। বিশ্বে অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠান কিন্তু ইন্টারনেট রেডিওতে বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের পণ্যের প্রচার-প্রসার ঘটিয়ে নিচ্ছে। আমাদের দেশে এই সংস্কৃতির যাত্রা শুরু হতে ঢের বাকি।
ইন্টারনেট রেডিওর অগ্রদূত বলা হয় কার্ল ম্যালামাডকে। ১৯৯৩ সালে তিনি প্রথম চালু করেন ‘ইন্টারনেট টক রেডিও’। প্রতি সপ্তাহে তিনি একজন কম্পিউটার এক্সপার্টের সাক্ষাৎকার নিতেন তাঁর রেডিওতে। এর পর ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রচলিত রেডিও স্টেশন ইন্টারনেটে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। তবে মার্কিন ইন্টারনেট রেডিওগুলো জনপ্রিয় হয় প্রখ্যাত সংগীতশিল্পীদের কনসার্ট লাইভ সম্প্রচার করে। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন রেডিওগুলোর আয় ছিল ৪৯ মিলিয়ন ডলার। পরবর্তী তিন বছরে তা পৌঁছায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারে। ২০০৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ‘ব্রিজ রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তিন হাজার মার্কিনের ওপর একটা জরিপ করে। এতে বেরিয়ে আসে, মার্কিন ভোক্তাদের মধ্যে ১২ বা এর বেশি বয়সীদের মধ্যে ১৯ শতাংশ ওয়েবভিত্তিক রেডিও শোনে। অর্থাৎ ইন্টারনেট রেডিও অনুষ্ঠানের সাপ্তাহিক শ্রোতার সংখ্যা ৫৭ মিলিয়ন। স্যাটেলাইট রেডিও, হাই ডেফিনেশন রেডিও, সেলফোনভিত্তিক রেডিও থেকে অনলাইন রেডিও মানুষ বেশি শোনে।
প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় এক কোটির কাছাকাছি। যাঁরা কয়েক দশক ধরে আছেন, তাঁরা বলতে গেলে বাঙালি সংস্কৃতি ভুলতে বসেছেন। তাঁদের কাছে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, ভাষা-সংস্কৃতি নতুনভাবে পৌঁছার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখতে পারে এই রেডিও। প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য সরকারের যদি কোনো বিশেষ বার্তা থাকে, তাও পৌঁছানো যেতে পারে ইন্টারনেট রেডিওর মাধ্যমে।