রেডিওর জন্য লেখা
সহজ ভাষা ব্যবহার, ভাল টপ লাইন লিখতে পারা, সঠিক তথ্য ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সংবাদ পরিবেশন রেডিও-র জন্য লেখার ক্ষেত্রে খুবই জরুরি।
ভাল নিউজ কপি বা স্ক্রিপ্ট লেখার সময় কয়েকটি দিক আপনাকে খেয়াল করতে হবে। তার মধ্যে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে: আপনি যেটা লিখছেন, সেটা কি আপনি পুরোপুরি বোঝেন? আপনি নিজে যদি স্টোরিটি ভালমতো না বোঝেন, তাহলে আপনার শ্রোতা কীভাবে বুঝতে পারবে?
সৃজনশীল হন
কপি বা স্ক্রিপ্ট এমন হতে হবে যাতে শ্রোতা আসলেই প্রতিবেদন শুনতে আগ্রহী হয়। সৃজনশীল হবার চেষ্টা করুন; সব সময় গতানুগতিক ভাবে লিখবেন না। আপনি ভিন্নতা আনতে পারেন কয়েকটি পথে: একটি উক্তি বা কোটেশন যোগ করে, কিছু বর্ণনা দিয়ে, কিছু পটভূমি ব্যাখ্যা করে।
গৎবাঁধা বাক্য, প্রবাদ ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। আমাদের ভাষায় এসবের কোন প্রয়োজন নেই। খেয়াল রাখবেন, আপনি যেন বেশি পরিসংখ্যান বা বেশি এ্যাডজেকটিভ ব্যবহার না করেন। এগুলো শ্রোতাদের বিভ্রান্ত করতে পারে। আপনার কপির প্রতিটি শব্দ যেন অর্থবহ হয়। আপনি যেন প্রতিটি শব্দ ব্যবহারের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে পারেন।
প্রথম লাইন
স্টোরির প্রথম বাক্য বা ‘টপ লাইন’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বাক্য দিয়ে আপনি আপনার শ্রোতার মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবেন, তাদের বলতে পারবেন: ‘এই যে শোনেন, আমার কাছে দারুণ একটা গল্প আছে’। সুনির্দিষ্ট একটি ঘটনার খবর, যেমন কোন দুর্ঘটনা বা বোমা হামলার খবরের তথ্যগুলোই স্টোরিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু মাঝে-মধ্যে, এমন স্টোরি থাকে যেটা বেশ কিছু সময় ধরে বিস্তার লাভ করছে কিন্তু যেটার জন্য সহজে কোন টপ লাইন লেখা যায় না। যেমন ধরুন, যেদিন রাদোভান কারাদিজ দ্য হেগ-এর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির হচ্ছিলেন। আমরা আগেই জানতাম এটা হতে যাচ্ছিলো, কাজেই স্টোরিটিতে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করার জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হয়েছে। আমরা সে কাজ এভাবে করলাম:
তার সেই ঘন দাঁড়ি আর লম্বা চুল আর নেই, যেগুলো তিনি এক দশক ধরে ব্যবহার করেছেন জাতিসংঘের আইনজীবীদের কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখার জন্য। তার পরিবর্তে যে রাদোভান কারাদিজ দ্য হেগ-এর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকের সামনে উপস্থিত হলেন, তিনি ছিলেন পরিষ্কার শেভ করা কিছুটা হাল্কা গড়নের, পরনে গাঢ় রং-এর স্যুট এবং টাই।
সাংবাদিক হিসেবে আমাদের ‘স্পিন’ সম্পর্কে সজাগ থাকতে হয়। রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন লবিং গ্রুপ-এর নিজস্ব এ্যাজেন্ডা আছে, কিন্তু তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই না করে গ্রহণ করা উচিত নয়। সম্প্রতি আমাদের ব্রিটিশ সরকারের পরিবহন দফতর থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছিলো, যেখানে বলা হয়েছিল সরকার শীঘ্রই নতুন ট্রেন বানানোর জন্য কন্ট্রাক্ট দিতে যাচ্ছে। আমরা এই তথ্যকে ব্রিটেনের জন্য একটি ভাল সংবাদ হিসেবে স্টোরি লিখেছিলাম – যেহেতু এই কন্ট্রাক্ট নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে বা হুমকির মুখে থাকা চাকরি বাঁচিয়ে দেবে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরে জানা গেল যে, কন্ট্রাক্টটা দেয়া হয়েছে একটি কনসোর্টিয়ামকে, যার মধ্যে একটি জাপানি কোম্পানি আছে এবং শুধু একটি ব্রিটিশ কোম্পানিকে সুযোগ দেয়া হয়নি।
যত্ন নিন
আপনার লেখা কপির জন্য আপনাকে দায়িত্ব নিতে হবে। সাংবাদিক হিসেবে আপনার সুনাম নির্ভর করবে আপনি স্টোরিতে সব কিছু সঠিক ভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন কী না, তার ওপর। আগের কোন বুলেটিন বা সামারি থেকে কপি-পেস্ট করে বা সব কিছু ওয়েবসাইট থেকে তুলে দিয়ে কোন লাভ হবে না। সব সময় তথ্য যাচাই করে নিশ্চিত হয়ে নেবেন।